advertisement
advertisement
advertisement.

আমাদের গণতান্ত্রিক বিকাশে কতটা সহায়ক হবে

মার্কিন নতুন ভিসানীতি

২৭ মে ২০২৩ ১২:০০ এএম
আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ১১:৫২ পিএম
advertisement..

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে। তবে তা এসেছে কঠোর ভিসানীতির সতর্কবার্তার মাধ্যমে। এ উদ্যোগ সরাসরি কোনো দলের অনুকূলে নেওয়া না হলেও এতে যে বর্তমান সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সুবিধা হবে তাতে সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের এ জাতীয় পদক্ষেপের প্রাথমিক বার্তা পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী এক প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত তাকে আর ক্ষমতায় চায় না। সে সময় তিনি নাম না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করেই তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলছে, তারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য যে অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করছে এ পদক্ষেপ তারই অংশ। এমন ঘটনা নতুন নয়, অতীতে উগান্ডা, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও নিকারাগুয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্তাটি খুব স্পষ্ট। বলা যায়, এটি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের জন্য বিব্রতকর শক্তিশালী বার্তা। এমনিতেই দীর্ঘদিন একই দল ক্ষমতায় থাকার পর ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের ইচ্ছা জোরালো হয়, যার কিছুটা প্রতিফলন ঘটেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও হয়তো আওয়ামী লীগ হাল্কাভাবে নিতে পারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার আগে-পরে দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যায় ক্ষমতাসীন দলকে শক্ত বার্তা দেওয়ার জন্যই বর্তমান পদক্ষেপ। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই জিতুক যুক্তরাষ্ট্র চাইবে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। কারণ নানা কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিকভাবে শক্তিশালী হিসেবেই দেখতে চায়। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষে চলমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে তারা অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জোরালো চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। অনেক দিনের চেষ্টার পর তারা এখন রাজপথে যেমন জোরালো আন্দোলন তৈরি করতে পেরেছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তিধর দেশেরও দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। সব মিলে তাদের মনোবল এখন চাঙ্গা রয়েছে। তবে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান আগামী নির্বাচনের প্রচারণায় কীভাবে অংশ নেবেন তা স্পষ্ট নয়। তারা দুজনেই দণ্ডপ্রাপ্ত, তদুপরি খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হয়তো খালেদা জিয়ার কারাবাস ঠেকানো গেছে, কিন্তু তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ খোলা যাবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। বাইরের চাপে এ জট খুলবে বল মনে হয় না। তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে এ দুই শীর্ষনেতার অনুপস্থিতিতেও বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে ভালো করা সম্ভব। যদিও জায়েদা খাতুনের বিজয়ের কাণ্ডারি জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কৃত হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে আওয়ামী লীগকর্মী বলেই দাবি করেছেন। সরকার চেষ্টা করছে তারেক রহমানের স্ত্রীকেও দণ্ডের আওতায় এনে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে। সব মিলে আগামী নির্বাচন বেশ নাটকীয় ঘটনাবলির ইশারা দিচ্ছে। মানুষ অবশ্য পরিবর্তনের চেয়েও মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে লাগাম এবং সমাজজীবনে স্বস্তিই বেশি চায়। তবে পরিবর্তনকে তার একটি মাধ্যম ভাবতেও পারে। এর অর্থ ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন দলকে কঠিন বাস্তবতা সামলানোর প্রস্তুতি নিতে হবে।

advertisement