কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড বলা হয় ব্যাংককে। কৌশলী ও মসৃণ সঞ্চয় বিনিয়োগ প্রক্রিয়াও যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। উন্নয়নশীল একটি দেশে অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যাকিং খাতের জন্য অশনিসংকেত।
আমাদের সময় সংবাদসূত্রে জানা গেছে, ঋণ প্রদানে জালিয়াতি, ঋণ কেন্দ্রীভূত, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিÑ ব্যাংকিং খাতের জন্য হুমকি ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে শিল্পের পাশাপাশি কৃষি খাতেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। গত এপ্রিল শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মতো চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বেড়েছে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৩ শতাংশই রয়েছে সরকারি আট ব্যাংকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনিয়ম শব্দটি যেন ব্যাংকিং খাতের জন্য নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে যত্রতত্র ঋণ বিতরণ করায় তা আর আদায় হচ্ছে না। সেজন্য প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণ বাড়ছে। গত ডিসেম্বরে এ খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা এপ্রিলে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। এ হিসাবই বলে দেয় আমাদের ব্যাংকিং খাত মারাত্মকভাবে খেলাপি ঋণ দ্বারা জর্জরিত। ব্যাংকিং খাতের এমন অনিয়ম বন্ধ করা জরুরি। একটি দেশের ব্যাংকব্যবস্থা হচ্ছে সে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এখানে গ্রাহকরা যে অর্থ সঞ্চিত রাখবেন, তাই আবার অন্যদের ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিই বিনিয়োগকারীদের পুঁজির চাহিদা মেটাবে। কিন্তু নিয়ম না মানার কারণে খেলাপি ঋণগ্রহীতা ও মন্দ ঋণগ্রহীতারা ব্যাংকের অর্থ নিয়ে নেন। প্রকৃত উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হন। সেজন্য ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির সঙ্গে আদায়ও করতে হবে আর বিশেষ করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন কৃষি উন্নয়নে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা উন্নত করার দিকেও সরকারকে যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর জন্য একে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই উন্নত ব্যাংকিংব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতি গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।