advertisement
advertisement
advertisement.

সতর্ক থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিপ্রায় নিয়ে

আবুল মোমেন
২৭ মে ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ১২:২২ এএম
advertisement..

বাংলাদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত ভিসানীতিকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নয় বলে দাবি করেছেন। তার বক্তব্য হলো- যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত কাক্সিক্ষত মিত্র। তারা বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক মিত্র দেশ হিসেবেই গণ্য করে। শুধু উন্নয়নশীল বিশ্বে গণতন্ত্রের বিকাশ, মানবাধিকার নিশ্চিতে তার দেশের নীতি বাস্তবায়নেই বাংলাদেশের জন্য তাদের এ সতর্কবার্তা। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ বটে, তবে ইতিহাস বলে- উন্নয়নশীল দেশের শাসক কোন দল বা ব্যক্তি সেটা নিয়ে এই পরাশক্তির মাথাব্যথা কম। তারা এমন দেশের শাসকের স্বাধীনচেতা মনোভাব প্রত্যাশা করে না। আর এই মনোভাব যদি তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তা হলে যুক্তরাষ্ট্র বরাবর প্রতিশোধ নিতে দেরি করেনি।

advertisement

বাংলাদেশের ঘোষিত পররাষ্ট্র নীতি হলো- বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত ‘সবার প্রতি বন্ধুতা, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’ নীতি। বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা নিজেও এতকাল এ নীতিই অনুসরণ

করে এসেছেন। কিন্তু এ মাসের গোড়া থেকে তার কণ্ঠে আমেরিকার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছিল। এমন মন্তব্যও তিনি করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বোধহয় তাকে ক্ষমতায় আর দেখতে চায় না। বাস্তবতা হলো- যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে আমলাতন্ত্র, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী, বিচার বিভাগ, সরকারি দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তার একটি প্রত্যাশিত গাইডলাইন দিয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কেই তাদের সাধারণ বক্তব্য। কিন্তু তা যেভাবে আগাম ব্যক্ত হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আভাস মেলে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমানে বামপন্থি দলসহ কোথাও থেকে দেশপ্রেমিক স্বাধীন মতামত শোনা যায় না।

প্রশ্ন হলো যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশ বা তার আগামী নির্বাচন নিয়ে এত উতলা হয়ে পড়ল? সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে যুক্তরাষ্ট্র এক মেরু বিশ্বের একক মুরব্বির ভূমিকাতে অভ্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে চীন এবং রাশিয়া স্বতন্ত্র বিশ্বশক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এদিকে ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত মিলে দক্ষিণ-দক্ষিণ একটি অক্ষ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব নিশ্চিত করতে আগ্রহী। তারা কি শেখ হাসিনাকে এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য মনে করছে না? কারণ গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের ধুয়া যে চোখে ধুলো দেওয়ার শামিল তা সবাই বোঝেন। কারণ সৌদি আরব বা মিশরের মতো একনায়কি শাসন ও মানবাধিকার ভূলণ্ঠনকারী দেশ বা শাসকের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের কখনো কোনো আপত্তি দেখা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত-মানের সুবিধাবাদ সম্পর্কে বিশ্ব অবগত। ফলে শক্তিধর এই দেশ ও তার মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করি।